মোরেলগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
রওশনারা স্মৃতি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ক্লাস ৮ এর ছাত্রী রাইসা আক্তার বয়স মাত্র ১৩ বছর। স্বপ্ন বড় হয়ে প্রশাসন বিভাগে চাকরি করবেন হবে র ্যাব।
এই অল্প বয়সে ই তিনি স্বাক্ষী হয়েছেন অনেক কিছুর। হতদরিদ্র পরিবারে জন্ম রাইসার তিনি হয়তো যানেনই না যে তার পরিবার তার পড়ালেখার খরচ ই বহন করতে পারছে না। রাইসার ২ ভাই-বোন। সংসারে বাবা থেকেও নেই মা লোকলজ্জা করতে পারছে না কাজ তাই তো কলেজ পড়ুয়া বড় ভাই রাতুল ইসলাম (১৬) কে করতে হচ্ছে রাজমিস্ত্রী’র কাজ। কিভাবে বন্ধ করবো আমরা শিশু শ্রম।
রাইসার মা রিবু বেগম ছেলে পড়ালেখা খরচ বহন করতে না পেরে রাতুল ইসলামকে পাঠিয়ে দেন রাজমিস্ত্রী’র কাজে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ছেলের লেখা পড়া। রিবু বেগম ছেলেকে পড়ালেখা না করাতে পারলেও মেয়েকে নিয়ে তার স্বপ্ন সীমাহীন। ভাইয়ের রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে কষ্টার্জিত অর্থ আর উৎসাহে চলে তার পড়াশোনা। সব কষ্টকে উপেক্ষা করেই ক্লাস ৫ এ ২য় স্থান লাভ করে রাইসা। ক্লাসে পড়া ক্লাসে ই পড়তে হয় রাইসাকে কারন তাকে প্রাইভেট শিক্ষক দেওয়ার মত অবস্থানে নেই রিবু বেগমের। বর্তমানে ক্লাস ৮ এ তার রোল ৭।
রাইসা আক্তার মোরেলগঞ্জ উপজেলার পৌর ৩নং ওয়ার্ডের উত্তরসরালিয়া গ্রামের মোঃ আলাউদ্দিন ফরাজি’র মেয়ে। ১২৩ নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম পরিক্ষায় ২য় স্থান হয়ে ভর্তি হয় রওশনারা স্মৃতি মাধ্যমিক বিদ্যালয়। ৫৩ তম বাংলাদেশ জাতীয় স্কুল, মাদ্রাসা ও কারিগরি শীতকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ২০২৫ এ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ নাজমুল ইসলাম ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের স্বাক্ষরিত চারটি সার্টিফিকেট রয়েছে রাইসার। আছে ব্যাডমিন্টন এ প্রথম হওয়া পুরস্কার, রয়েছে ১৬ই ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে উপজেলা চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগীতায় দ্বিতীয় হয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের হাত থেকে পুরস্কার পাওয়ার কীর্তি। এত এত কীর্তির মাঝেও জীবন যুদ্ধে হেরে যাওয়ার ভয় রয়েছে রাইসার মায়ের।
রিবু বেগম বলেন, খুব কষ্ট করে সন্তানদের বড় করেছি। অভাবের কারণে ছেলেটাকে কলেজে ভর্তি করেও পড়ালেখা করাতে পারছি না ছেলের আয় উপার্জনে ই চলে সংসার। মেয়েটার মেধা ভালো, সে পড়তে চায়। আমিও চাই আমার মেয়ে ভালো কিছু করুক। মেয়ে বড় হয়ে চায় র ্যাব হতে।
রাইসার বড় ভাই রাতুল ইসলাম বলেন, আমি এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বুক ভরা স্বপ্ন নিয়ে সরকারি সিরাজ উদ্দিন মেমোরিয়াল কলেজে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছিলাম। কিন্তু পরিবারের দায়িত্ব যখন মাথায় এসে যায় তখন আর লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না তবে একমাত্র বোনকে সবসময় উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছি দিন দিন ও ভালো রেজাল্ট করেছে, যেখানে সবাই ২/৩ প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েও পারে না সেটাও একাই সমাধাণ করে এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের।
রাইসা আক্তার বলেন, আমার সাফল্যের পেছনে মা এবং ভাইয়ার অবদান সবচেয়ে বেশি। তারা আমাকে সবসময় ভালোটাই দিয়েছেন। পাশাপাশি স্কুলের স্যারদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। আমি ভবিষ্যতে র ্যাব হতে চাই। এজন্য সবার দোয়া চাই। এছাড়াও তিনি আরো বলেন মোরেলগঞ্জে বর্তমানে যে উপজেলা কর্মকর্তা রয়েছে তিনি অত্যান্ত মিশুক খেলাধুলার পুরস্কার আমি তার হাত থেকেই নিয়েছি। স্যার অত্যান্ত ভালো মানুষ তার মাধ্যমে যদি আমি বা আমার পরিবার কিছু সহযোগিতা পেতাম তাহলে হয়তো আমার পথচলা একটু হলেও সহজ হইতো।