মোরেলগঞ্জ (বাগেরহাট) প্রতিনিধিঃ
বাগেরহাটের মোরলগঞ্জে নিশানবাড়ীয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার মোঃ শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারীর মধ্যে ১৫ জনের ১৪ জন শিক্ষক-কর্মচারী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বরাবর এ বিষয় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
প্রাপ্ত অভিযোগে জানাগেছে, উপজেলার খাউলিয়া ইউনিয়নের নিশানবাড়ীয়া গ্রামে প্রতিষ্ঠিত নিশানবাড়ীয়া দাখিল মাদ্রাসায় এনটিআরসি কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক মৌসুমি পারভীন ২০২২ সালে মার্চ মাসে ওই মাদ্রাসায় যোগদান করে ৭ মাস মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীদের পাঠদান করেন। এরপর ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে মাতৃত্বকালীন ছুটি নিয়ে তিনি অদ্যবদি আর মাদ্রাসায় ফিরেননি।
কিন্তু তিনি মাদ্রাসায় না আসলেও সুপারের সাথে যোগসাজস করে নিয়মিত বেতন তুলে নিয়েছেন। শিক্ষক মৌসুমি’র কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি পাবনা সরকারি টিটি কলেজ থেকে বিএড কোর্স করার জন্য মাদ্রাসা থেকে ছুটি নিয়েছেন। এবিষয় মাদ্রাসার শিক্ষকগণ ওই টিটি কলেজে খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছেন মৌসুমি নামে ওই কলেজে কোন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়নি। ফলে শিক্ষক মৌসুমি ও সুপার যোগসাজস করে ২৫ মাসের বেতন হাতিয়ে নিয়েছেন এবং মাদ্রাসা সুপারের সাথে যোগসাজসে শিক্ষক মৌসুমি নিজ বাড়িতে অবস্থান করে বেতন হাতিয়ে নিয়েছেন। এছাড়া শিক্ষক মৌসুমি ব্যাংক চেক বই শেষ হয়ে গেলে জনৈক ব্যাক্তিকে শিক্ষক মৌসুমির স্বামি বানিয়ে তার দ্বারা স্বাক্ষর করিয়ে চেকবই তুলেছেন সুপার। এ বিষয়ে শিক্ষক মৌসুমির মুঠো ফোনে যোগাযোগের চেষ্ঠা করলে তার মুঠো ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
অভিযোগ রয়েছে, ২০১৫ সাল থেকে সুপার মোঃ শহিদুল ইসলাম অদ্যবদি কোন আয় ব্যায় শিক্ষক পরিষদে উপস্থাপন করেননি। কোন শিক্ষক অনিয়মের ব্যাপারে কথা বল্লে তাকে বিভিন্ন ভাবে হয়রানী করে থাকেন। যে কারণে শিক্ষকগণ সবসময় ভয়ের মধ্যে থাকেন। শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি দেয়ার কথা বলে সুপার বিভিন্ন শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের কাছ থেকে অবৈধভাবে অর্থ আদায় করেছেন। সুপার মোঃ শহিদুল ইসলাম শিক্ষকদের প্রাপ্য টিউশন ফি আত্মস্বাৎ করে আসছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
আরও অভিযোগ রয়েছে, মাদ্রাসায় সহকারী সুপার ও দুইজন কর্মচারী নিয়োগের কালে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের স্বাক্ষর জাল করে রেজুলেশন তৈরী করে ডিজির প্রতিনিধি মনোনয়ন প্রদান করে জালিয়াতীর মাধ্যমে নিয়োগ দিয়ে কয়েক লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেন। বিষয়টি তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস. এম. তারেক সুলতানের কাছে ধরা পরলে নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে সুপারের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেননি উপজেলা নির্বাহী অফিসার।
এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে, ২০২৪ সালে দাখিল পরীক্ষায় পরীক্ষা কেন্দ্রে নকল সরবরাহকালে ধরা পরায় সুপার মোঃ শহিদুল ইসলামকে পরীক্ষা কেন্দ্রের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়।
সুপার মোঃ শহিদুল ইসলাম মাদ্রাসার বিভিন্ন কাজের অজুহাত দেখিয়ে তার ইচ্ছামত মাদ্রাসায় যাতায়াত করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক জানান, সুপার সপ্তাহে একদিন মাদ্রাসায় গমন করে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে আবার চলে যান।
একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, তাদের উপবৃত্তির টাকা সুপার সাহেব তার মোবাইলে নিয়ে নিতেন। মাদ্রাসায় সহকারী সুপার ও দুইজন কর্মচারী নিয়োগের জন্য আবেদনের সাথে ব্যাংক ড্রাফ্টটে ২৯ হাজার টাকা ব্যাংক থেকে তুলে তিনি আত্মস্বাৎ করেন। তার অনিয়মের কারণে মাদ্রাসাটি আজ শিক্ষার্থী শূণ্য বল্লেই চলে। এ অবস্থা চলতে থাকলে অচিরেই মাদ্রাসাটি বীলিন হয়ে যাবে।
এ ব্যাপারে সুপার মোঃ শহিদুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শিক্ষক মৌসুমিকে বার বার শোকজ নোটিশ করা হলেও তিনি কোন জবাব দেননি, এখন তাকে সাময়ীক বরখাস্ত করা হবে। টিউশন ফি মাদ্রাসার উন্নয়ন ফান্ডে ব্যয় করা হয়েছে। হিসাব দেয়ার বিষয়টি তার দায়িত্বে নয় এটি করনিকের ব্যাপার। এছাড়া উপবৃত্তির টাকা আত্মস্বাতের সুযোগ তার নেই।
অভিযোগ সম্পর্কে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ নাজমুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ পেয়ে তদন্ত কমিটি করে দেয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।